উদ্বাস্তু অভিবাসীদের প্রতি সাড়া দিতে বিশ্ব সম্প্রদায় ব্যর্থ হয়েছে।
গত মাসে আন্তর্জাতিক অভিবাসী সংগঠন (আইওএম) ঘোষণা প্রদান করে যে তারা আর ইয়েমেনে অভিবাসন পুনর্বাসন করতে পারবে না। মানবিক সাহায্য প্রদানের বিষয়টি বজায় রাখার জন্য গত বছর তারা অতিরিক্ত অর্থ সাহায্যের জন্য অনুরোধ করে, যার মধ্যে ইয়েমেনে কর্মরত আফ্রিকার অভিবাসীদের (বিশেষ করে সৌদি –ইয়েমেন সীমান্তে আটকে পরাদের) পুনর্বাসনের বিষয়টি অর্ন্তভুক্ত। এই সমস্ত অভিবাসীদের একটা বড় অংশ ইথিওপিয়া থেকে আসা নাগরিক, যারা এই দেশটিতে কাজের সন্ধানে এসেছিল, কিন্তু তার বদলে এখন তারা ইয়েমেনের আভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে আটকা পড়ে গেছে। পর্যাপ্ত ফান্ডের অভাব গতবছর অভিবাসীদের পুনর্বাসনের কাজে বাধা দিয়েছে, এবং এটি তাদের আরও বিপাকে ফেলে দিয়েছে। ক্রমাগত হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে বেকার অভিবাসীদের সংখ্যা, যারা খাদ্য ও আবাসনের সংস্থান না করতে পেরে মানবেতর জীবন যাপন করছে। সম্প্রতি ইতালী ৩৫টন রিলিফের ব্যবস্থা করেছে যা আইওএম এর মাধ্যমে বন্টন করা হবে। তবে তাদের পুনর্বাসন কাজ বন্ধ আছে।
আইএমও নিজে যে বিপাকে পতিত হয়েছে তা সংগঠনের নিজস্ব অব্যবস্থাপনার ত্রুটির প্রতিফলন নয়, বরঞ্চ তা আরব বিপ্লবের বসন্তে দুর্দশায় পতিত হওয়ার অভিবাসীদের ক্ষেত্রে সাড়া দিতে বিশ্বের বৃহৎ ব্যর্থতার এক চিত্র। গত সপ্তাহে এক কর্মকর্তার রিপোর্ট-এ অবশেষে স্বীকার করে নেওয়া হয়, ২০১১ সালে লিবিয়া থেকে পালানোর সময় ৬৩ জন অভিবাসী কর্মীর অপ্রয়োজনীয় মৃত্যু এড়ানো সম্ভব ছিল। ন্যাটো এবং ইউরোপের কোস্ট গার্ডরা হয়ত এই সমস্ত উদ্বাস্তুদের উদ্ধার করতে পারত, কিন্তু তারা তা করেনি। এই সমস্ত অভিবাসীদের নৌকা উদ্দেশ্যবিহীন ভাবে ঘুরতে থাকার কারণে এর যাত্রী উদ্বাস্তুরা অনাহারে মারা যায়। এদিকে এই রিপোর্টে কিছু যোগাযোগ ত্রুটি এবং পরিচালনা প্রক্রিয়ায় গলদের কথা উল্লেখ করা হয়। এতে পরিষ্কারভাবে দেখা যাচ্ছে যে সামুদ্রিক জাহাজের কর্মকর্তারা, উক্ত নৌকার কাতর আহবানে সাড়া দিতে ব্যর্থ হয়েছিল।
পুরো বিপ্লবের সময়নুসারে এই বিষয়ে আন্তর্জাতিক উপেক্ষার ঘটনাগুলি নথিবদ্ধ করা হয়েছে - বাসে ভীড় করা এবং বিমানবন্দরে দাঁড়ানো অভিবাসীদের ছবি সম্ভবত এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য নথি। তবে, তার ঠিক পরিপূর্ণ এক বছর পরেও, একই সমস্যা রয়ে গেছে: যা ইচ্ছাকৃত উপেক্ষার মাধ্যমে, অথবা অর্থায়নের অভাবে ঘটেছে - কর্ম এলাকা থেকে উদ্বাস্তু হয়ে যাওয়া নাগরিকদের প্রতি যথেষ্ট সাড়া দিতে বিশ্ব সম্প্রদায় ব্যর্থ হয়েছে।
এ রকম নিদর্শন রয়েছে যে এই ধরনের পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিকভাবে উদ্ধার প্রক্রিয়া ঠিক গ্রহণযোগ্য নয়, কারণ উদ্ধারকারী প্রতিষ্ঠানসমূহের এতে তাৎক্ষনিক বিপদ ঘটার সম্ভাবনা থাকে। তবে হয়ত কখনো কখনো ঝুঁকি মূল্যায়নে কিছু ভুল করা হয়েছে এবং দরকারের সময় নয়, কেবল পরবর্তীতে কর্ম এলাকা থেকে উদ্বাস্তু হয়ে যাওয়া নাগরিকদের ত্রাণ সরবরাহের সম্ভাবনার কথা উপলব্ধি করা হয়। কিন্তু ইয়েমেনের ক্ষেত্রে তার অভিবাসীদের এভাবে ভোগার কোন যৌক্তিক কারণ নেই- এর বাইরেও সম্পদের ক্ষেত্রে যে শূন্যতা দেখা দেয় যা দাতা রাষ্ট্র সমূহ যথা সময়ে অবমুক্ত করতে ব্যর্থ হয়েছে। এই রকম এড়ানোর বিষয়টি, এই সংঘর্ষে আটকে পড়া অভিবাসীদের পরিস্থিতি আরো খারাপ করেছে। যে সমস্ত অভিবাসী দ্রুত ঘরে ফিরে আসার জন্য মরিয়া তারা তাদের যন্ত্রণার নিঃসঙ্গতাকে চিহ্নিত করতে পারে। এবং তারা এর জন্য মরিয়া হয়ে যে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করে, যেমন অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই নৌকায় নিজেদের স্তুপ করে। সৃষ্টি হওয়া এই পরিস্থিতির ক্ষেত্রে বলা যায়, অন্য অর্থে তা খুব সহজে সমাধানযোগ্য ফলাফল প্রদান করতে পারত, তা জীবন হারানোর ঘটনা ঘটায় এবং আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের জন্য বেশ কিছু জটিলতার সৃষ্টি করে- যেমন ভাবমূর্তি এবং আভ্যন্তরীণ পুনরায় সংগঠন-এর ক্ষেত্রে জটিলতার সৃষ্টি করে, যারা এখন ইউরোপীয় সমুদ্র শক্তির মুখোমুখি হবে।
আরব বসন্তের ঘটনার ফলে উদ্বাস্তু হয়ে পড়া নাগরিকদের ক্ষেত্রে বৃহত্তর পরিসরে অভিবাসীদের ছত্রভঙ্গ হয়ে যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে ব্রুকিং ইনিস্টিটিউট একটি অসাধারণ প্রকাশনা তৈরী করেছে, যা কিনা বিষয়টির উপর মনোযোগ প্রদান করেছে। উর্ধ্বতন বিদেশ নীতি বিষয়ক গবেষক খালিদ কোশের এই ঘটনায় বিশ্ব সম্প্রদায়ের কর্মকাণ্ড এবং অভিবাসীদের কর্মস্থল থেকে উদ্বাস্তু হয়ে যাওয়ার বিষয়টির ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে সাড়া দেওয়ার বিষয়টির প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি কেমন হবে তাই নিয়ে বিশ্লেষণ করেছেন।
আরব বসন্তের ঘটনায়, গত ১২ মাসে অভিবাসন এবং উদ্বাস্তু হয়ে যাওয়ার বিষয়ে লাভ করা শিক্ষার আগামী বছরগুলোতে একটি পরিষ্কার প্রয়োগ হবে। সিরিয়া এক বিলম্বিত এবং ভয়াবহ সংঘর্ষের চরিত্র হয়ে উঠেছে, সাধারণ নাগরিকদের রক্ষার জন্য কোন রাজনৈতিক সদিচ্ছা দেখা যাচ্ছে না। সেখানকার সিভিল সংগঠনগুলো দুর্বল এবং বিশাল এক অভিবাসী জনগোষ্ঠী উপস্থিত, যার জন্যে বিশেষভাবে কর্ম এলাকা থেকে তারা উদ্বাস্তু হয়ে যেতে পারে। তবে এই অভিবাসী জনগোষ্ঠী, অভিবাসী শ্রমিকের বদলে ব্যাপকভাবে উদ্বাস্তুদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত। সিরিয়ার সংঘর্ষের বাড়তে থাকলে, এক পর্যায়ে তা তাদের আবারো এক স্থান থেকে আরেক স্থানে চলে যেতে বাধ্য করবে। আর কি ভাবে তাদের সাহায্য করা হবে এবং নিরাপত্তা প্রদান করা হবে, ইউএনএইচসিআর এবং আর্ন্তজাতিক সম্প্রদায়ের জন্য তা এক গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ। আর এই বিষয়টি পরিষ্কার যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ব্যাপকহারে আশ্রয়প্রার্থী অভিবাসীদের আগমন প্রতিরোধ করবে, যার অর্থ হচ্ছে সিরিয়ার ঘটনায় উদ্বাস্তু হয়ে যাওয়া অভিবাসীদের বোঝা দেশটির প্রতিবেশী, বিশেষ করে তুরস্কের উপর এসে পড়বে।
প্রবন্ধটি এখানে পাঠ করুন ইংরেজীতে।
This post is a translation from this article in English (Global Community Fails To Respond To Displaced Migrants) from the “MigrantsRights” Website
Translated into Bangla by Bijoy.