এইডস আক্রান্ত পরিচারিকা এবং বেদনার অন্য উপাখ্যানগুলো
বিচিত্র ও আতঙ্কজনক সব কাহিনী এখন উপসাগরীয় প্রচার মাধ্যমের নিয়মিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঘটনার মূল চরিত্র ও প্রচার মাধ্যম উভয়েই কাহিনীগুলো বিশ্লেষন ছাড়াই প্রকাশ করায় (এবং মাঝে মাঝে উদ্দেশ্যে প্রণোদিতভাবে বিকৃত করে পরিবেশন করে), তা অভিবাসী ও গৃহকর্মীদের সম্বন্ধে ক্রমশই ভীতিকর এক পরিবেশ তৈরীতে সহায়তা করেছে। গত মাসে এই ধরনের কিছু পোস্ট, সম্প্রতি আমরা যে এই ধরনের কিছু সংবাদ প্রদান করেছিলাম, সেই ধারাকে চিত্রিত করছে, যা ক্রমশ আরো শক্তিশালী হয়ে উঠছে।
সম্প্রতি সৌদি আরবে ‘এইডস আক্রান্ত পরিচারিকা” বিষয়ক বেশ কয়েকটি সংবাদে আতঙ্ক ছড়ানোর বিষয়টি ধরা পড়ে। একজন নিয়োগকর্তা, সম্প্রতি আত্মগোপন করা তার এক গৃহ পরিচারিকাকে কাজে না নেওয়ার জন্য স্বদেশী নাগরিকদের “সতর্ক করে” এক ছবি বার্তা গণহারে ছড়িয়ে দেয়। সেখানে বলা হয় উক্ত পরিচারিকা নাকি এইডস আক্রান্ত। এই বার্তাটি যথেষ্ট অস্থিরতা ছড়ায়, যার ফলে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ এতে সাড়া দিতে বাধ্য হয়। কয়েকদিন পরে, এক সৌদি নারী তার পরিবারের সদস্যদের মধ্যে এইডস ভাইরাস ছড়ানোর জন্য গৃহ পরিচারিকাটিকে অভিযুক্ত করে, যাকে সে দু’বছর পূর্বে কাজে নিযুক্ত করেছিলো। প্রবন্ধে এই বিষয়টি উল্লেখ করতে ব্যর্থ হয়ে যে এইডস কেবলমাত্র শরীর থেকে নির্গত তরল-এর (যেমন রক্ত বা বীর্য) মাধ্যমে ছড়াতে পারে এবং সঙ্গত কারণে প্রবন্ধের সবচেয়ে উদ্বেগজনক দিকও হচ্ছে এটি। এখন পর্যন্ত মহিলার বিস্তারিত পরিচয় অজানা রয়ে গেছে; ঘটনাটি জনতার এই ধরনের ডাইনি শিকারের সেই চিরায়ত স্বভাবের চেহারা প্রদান করেছে, এখন সে নিঃসঙ্গ এবং আতঙ্কিত।
অন্য একটি প্রবন্ধে জানা যাচ্ছে যে, শিশুদের প্রতি বাজে আচরণের জন্য সৌদি আরবের পরিচারিকারা ভর্ৎসনার স্বীকার হয়ে থেকে। সাধারণ সতর্কতা, পিতা-মাতাকে তাদের পরিচারিকাদের আচরণ পরীক্ষা করে দেখার সুযোগ করে দিয়েছে এবং ইতোমধ্যে তাদের প্রতিদিনের কাজে অংশত নিয়ন্ত্রণ প্রদান করেছে। যথারীতি এই ঘটনা এটাই প্রমাণ করে, পর্যবেক্ষণ এবং সাধারণ নিয়মে মাঝেমধ্যে বাঁধাগ্রস্ত হয়। এই প্রবন্ধটি নিয়োগকর্তা এবং চাকুরীজীবীর মধ্যে কোন মিথস্ক্রিয়া ঘটাতে ব্যর্থ হয়েছে, পরিবর্তে এই প্রবন্ধের কারণে দায়িত্ববান ”পিতা-মাতা” অকারণে তাদের গৃহকর্মীদের সন্দেহ করা শুরু করেছে (কিছু ক্ষেত্রে গোপনে নজর রাখে), যা কাজের পরিবেশ উত্তেজনার তৈরী করছে; মূলত তা কাউকেই সাহায্য করেছে না।
এই গল্পগুলি সাদামাটাভাবে সন্দেহের সংস্কৃতির বিকাশ সাধনে সহায়তা করে, যা ভাল আচরণ করা অভিবাসী শ্রমিকদের ব্যাপারে মারাত্মক প্রভাব ফেলবে। অনেক পরিচারিকা অপরাধ না করেও কেবল সন্দেহের বশে অভিযুক্ত হয়। কেবল কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের কারণে সাম্প্রতিক এক ঘটনায় একটি গৃহপরিচারিকা চুরির দায়ে অভিযুক্ত হয়, যদিও নিয়োগকর্তার মেয়ে নিজেই ঘটনার জন্য দায়ী ছিল। আমরা জানতেও পারি না যে কতজন এমনভাবে মিথ্যা অভিযোগে অভিযুক্ত হয় এবং এই ধরনের অভিযোগ থেকে উদ্ধার পাওয়ার মতো ভাগ্য তাদের ছিল কি না, কিংবা এই ঘটনায় তারা চাকুরী হারিয়েছিল কি না, অথবা তাদের ক্ষেত্রে আরও খারাপ কিছু ঘটেছিল কিনা।
অভিবাসন গণ কর্মকাণ্ড এবং আধুনিক আরামের প্রধান অবলম্বন, এমন ধারণার চেয়ে বরং অভিবাসী শ্রমিকরা সমাজের জন্য হুমকি স্বরূপ এই ধরনের ধারণা তৈরী হচ্ছে, যা কিনা এক ভয়াবহ পরিণতির দিকে ঠেলে দিচ্ছে। অন্তঃসারশূন্য, নেতিবাচক মনোভাবের কারণে, অভিবাসী শ্রমিকদের প্রতি অমর্যাদা প্রদর্শন করা হচ্ছে ও নিজস্ব স্বার্থে তাদের শোষণ করার প্রবণতা বাড়ছে, কারণ সমাজের শত্রু হিসেবে বিবেচিতদের প্রতি কোন ধরনের দয়া প্রদর্শন না করা হতে পারে। নাগরিকদের বিভ্রান্তিকর ভয় এবং আতঙ্ক, প্রবাসী শ্রমিক ও অভিবাসীদের সামাজিক ও আইনগত উভয় অধিকার প্রদানের বিষয়ে কথা বলতে অনুৎসাহিত করে।
এই সাইটের উদ্দেশ্য হচ্ছে শ্রমিকদের কণ্ঠকে জোরালো করে এই ধরনের প্রবন্ধের বিপরীত-বর্ণনাকে তুলে ধরা। আর এক কারণে আমরা ক্রমাগত এই ধরনের প্রবন্ধ তুলে ধরব, তাদের অযৌক্তিক আচরণের কথা উল্লেখ করব, এবং তাদের ভয়াবহ সমস্যার গুরুত্বহীনতার বিষয় প্রকাশ করব।
- অনুবাদ করেছেন বিজয়
This post is a translation from this article in English (The “Aids Maid” And Other Sad Tales) from the "MigrantsRights" Website
This post was translated by Bijoy.