সৌদি স্পন্সরে কাজ করা দুজন গৃহকর্মীর উপর নির্মম অত্যাচারের ঘটনা এ সপ্তাহে প্রকাশ পেয়েছে। গৃহকর্মীদের একজনের মৃত্যু হয়েছে আর অপর একজন গুরুতর আহত।
২৩ বছর বয়সী সুমিয়াতি বিটি সালান মুস্তাফার প্রথম কেসটি সৌদি গেজেটে প্রকাশিত হয়। প্রাথমিক প্রতিবেদনে জানা যায় যে মুস্তাফা নামের মেয়েটি মদিনার একটি পরিবারে কাজের জন্য জুলাই মাসে সৌদি আরবে আসে। গত ৬ নভেম্বর মুস্তাফাকে মদিনার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়, সেসময় পা থেকে মাথা পর্যন্ত তাঁর শরীরে আঘাতের চিহ্ন ছিল এবং সে অচেতন অবস্থায় ছিল। বেসরকারি হাসপাতাল তাঁর চিকিৎসা প্রদানে ব্যর্থ হলে তাঁকে কিং ফাহাদ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। গেজেটে প্রদত্ত বক্তব্যে একজন কর্মী জানান যে মুস্তাফার” শরীরের অনেক জায়গা পোড়া, দুটো পা চলৎশক্তিহীন, পুরোনো আঘাতের চিহ্ন হিসেবে মাথার কিছু অংশের চামড়া নেই ঠোঁট ও মাথার চামড়ার অনেক অংশই নেই, মধ্যম আঙ্গুল ভাঙ্গা এবং চোখের নিচে কাটা।“ মুস্তাফার শরীরে অপুস্টি ও অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের চিহ্ন রয়েছে।
সৌদি আরবে ইন্দোনেশিয়ার সিটিজেন প্রোটেকশন কনসাল দিদি ওয়াহুয়ার্দি সিএন এনকে জানিয়েছেন যে চাকুরিতে যোগদানের প্রথম দিন থেকেই মুস্তাফাকে মারধর করা হত। আল- ওয়াতান সংবাদপত্রের প্রতিবেদন অনুযায়ী, “ মাথার চামড়া না থাকায় মদিনার কিং ফাহাদ হাসপাতালের অর্থোপেডিক ওয়ার্ডের ৩৬৫ নম্বর কক্ষে মুস্তাফার শরীরকে বিকৃত দেখাচ্ছিল... উপরের ঠোট ও আঙ্গুলসহ তাঁর ক্ষীণ শরীরের সর্বত্রই পোড়ার দাগ... সারা শরীরে ব্যান্ডেজ, সে খুব অল্পই শরীর নাড়াতে ও কথা বলতে পারছিল।"
আল- সৌদিয়া নামের অনলাইন সংবাদপত্রে আজ (শুক্রবার) এক প্রতিবেদনে জানা যায় যে এ মামলায় সম্পৃক্ততার কারনে মুস্তাফার মহিলা নিয়োগকর্তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মদিনার প্রধান পুলিশ কর্মকর্তার মতে পরিবারের তিনজন সদস্য এই নির্যাতনের সাথে জড়িত।
যদিও সৌদি সরকারের দাবি অনুযায়ী এটা একটা “বিচ্ছিন্ন ঘটনা” এবং “ প্রচার মাধ্যম অতিরঞ্জিত প্রতিবেদন” প্রকাশ করেছে, তারপরেও আবহা নামের সৌদি শহরের আরেকটি ঘটনা তাঁদের এ দাবিকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। সি এন এন-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী গত ১১ নভেম্বর কিকিম কোমলাসারি নামের ইন্দোনেশীয় একজন গৃহপরিচারিকাকে নির্মমভাবে শারীরিক আঘাত করে আবহার রাস্তায় ফেলে রাখা হয়। ইন্দোনেশীয় কর্মকর্তাদের মতে, এ আক্রমনের সন্দেহভাজন নিয়োগকর্তাকে সৌদি কর্তৃপক্ষ গ্রেফতার করেছে।
সৌদি আরবে কর্মরত প্রবাসী শ্রমিকদের ভাগ্যে এ ধরণের চুড়ান্ত অবমাননার ঘটনা ঘটে। প্রায়শই তাঁরা লাঞ্ছনার শিকার হন। সৌদি স্পন্সরশীপ ব্যবস্থায় নিয়োগকর্তাদের নিয়ন্ত্রনহীন ক্ষমতা এ ধরনের লাঞ্ছনার সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়। লাছনার শিকার প্রবাসী শ্রমিকরা তাঁদের স্পন্সর পরিবর্তন করতে পারেন না, কিন্তু স্পন্সররা ইচ্ছা করলে কর্মীদের দেশে ফেরত পাঠাতে পারেন এবং তাঁদের দেশত্যাগে বাধা দিতে পারেন। সৌদি শ্রম আইনের প্ররক্ষা থেকে গৃহকর্মীরা বঞ্চিত। প্রতিকার খুব কমই হয় বলে এ ধরণের লাঞ্ছনার ঘটনাগুলো ঘটে।